আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): ‘মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে মুসলিম উম্মাহর প্রাণকেন্দ্রে আন্তর্জাতিক জায়নবাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিশ্লেষণ’ শীর্ষক সম্মেলনে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন ইরানের কোম শহরের ইমাম খোমেনি (রহ.) শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক ইনস্টিটিউটের ফ্যাকাল্টি মেম্বার হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন ড. মুর্তাযা সানেয়ী।
‘আন্তর্জাতিক জায়নবাদ’ পরিভাষার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ড. সানেয়ী বলেন: মহামান্য রাহবার আয়াতুল্লাহ আল-উজমা ইমাম খামেনেয়ী তার বিভিন্ন ভাষণে এই পরিভাষাটি ব্যবহার করেন। যা কিছু বর্তমানে মজলুম ফিলিস্তিনী জাতিকে কেন্দ্র করে ঘটছে তা হলো, অত্র অঞ্চলে জায়নবাদী ইহুদিদের উপস্থিতি। জনসাধারণের ধারণা হলো ইহুদি জায়নবাদ নামে একটি জায়নবাদ রয়েছে, আর তাদেরকে পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিতাড়িত করে মুসলিম উম্মাহ’র প্রাণ কেন্দ্রে বসানো হয়েছে। জনসাধারণ মন করে যে, এরাই একমাত্র জায়নবাদী; অথচ ইহুদি জায়নবাদীরা তাদের ধর্মের শিক্ষার বিপরীতে এ ভূখণ্ডে প্রবেশ করে ভুয়া রাষ্ট্র গঠন করেছে। অথাৎ তারা স্বয়ং তাদের ধর্মীয় শিক্ষাকেই পদদলিত করেছে।
ইহুদি জায়নবাদের স্বকীয়তা সম্পর্কে তিনি বলেন: যদি কোন উম্মত বা মুভমেন্টে তাদের ধর্মীয় শিক্ষাকে পৃষ্ঠ দেখায়, তাদের সামনে অপর জাতি, কিতাবে মুকাদ্দাস, কুরআন ও মুসলিম উম্মাহ তো কোন মূল্যই রাখে না।
ইমাম খোমেনি (রহ.) শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক ইনস্টিটিউটের ফ্যাকাল্টি মেম্বার, ইহুদি জায়নবাদের ইতিকথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন: প্রায় ১০০ বছর আগে খ্রিষ্টান জায়নবাদের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে ইহুদি জায়নবাদ অস্তিত্ব লাভ করে। খ্রিষ্টান জায়নবাদিরা পশ্চিমা দেশগুলোতে সর্বপ্রথম ইহুদি জায়নবাদের বীজ বপন করে। তারা পশ্চিমা প্রেটেস্টান্ট (প্রতিবাদী মতবাদ) খ্রিষ্টানদের মাঝ থেকে ‘পিউরিট্যানস’ নামে নতুন এক শাখার তৈরি করে। তারা শুরুতেই ঘোষণা করে বসে যে, আমরা কিতাবে মুকাদ্দাসের শিক্ষা বাস্তবায়ন ঘটাতে চাই এবং ‘মাশীহ’র আবির্ভাবের অপেক্ষায় রয়েছি। সুতরাং হযরত ঈসা মসীহ’র আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে। উগ্র খ্রিষ্টান এ গোষ্ঠী ‘খ্রিষ্টান জায়নবাদ’ নামে একটি মতাবাদের জন্ম দেয় এবং এ মতবাদের প্রসার ঘটিয়ে ঘোষণা দেয় যে, আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুত, শেষ যামানার যুদ্ধ ও আরমাগেডনের যুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুত করার জন্য ইহুদিদেরকে বলতে হবে তোমরা ফিলিস্তিনীদের দিকে রওয়ানা হও।
তিনি বলেন: জায়নবাদী ইহুদিদের নিকট অন্য ধর্মের মানুষ মূল্যহীন; তারা হাজার হাজার শিশু, বৃদ্ধ, যুবক ও নারী হত্যা এবং তাদের লাশকে বিকৃত করেছে। তারা ফিলিস্তিনের বাসিন্দা নয় বরং ইউরোপ, আমেরিকা ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে মধ্যপ্রাচ্যে এসেছে। ৫ লক্ষাধিক লোককে ফিলিস্তিনে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল; এ সময় তাদের আবাসন ও কাজের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, যাতে তারা মুসলিম উম্মাহ’র গলার কাঁটায় পরিণত হতে পারে।
জায়নবাদী ইহুদিদের উৎস মূলতঃ বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদ থেকে -এ কথা উল্লেখ করে ড. সানেয়ী বলেন: এ অঞ্চল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকদের দখলে ছিল। সুতরাং ব্রিটেন ও আমেরিকার সহযোগিতা ব্যতিত ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডে ভুয়া এ সরকার গঠনের পরিকল্পনা কখনই আলোর মুখ দেখতো না।
তিনি বলেন: কেউ কেউ দাবি করেন যে, জায়নবাদীরা ফিলিস্তিনীদের জমি কিনে নিয়েছে, অথচ বাস্তবতা ভিন্ন কিছু। তারা শুধুমাত্র ফিলিস্তিনের মাত্র ৩ শতাংশ জমি কিনেছে বাকিটা তারা জোর করে দখল করে নিয়েছে। আজ প্রিয় ফিলিস্তিন, কুদস, বাইতুল মোকাদ্দাস ও মসজিদুল আকসা ইসরাইলের ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও জায়নবাদী ইহুদিদের দখলে; মূল ফিলিস্তিন ভূখণ্ড হতে শুধু গাজা স্ট্রীপ এবং জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর অবশিষ্ট রয়েছে; বর্তমানে গাজাকেও তারা ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে।
ইমাম খোমেনি (রহ.) শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক ইনস্টিটিউটের ফ্যাকাল্টি মেম্বার ‘আব্রাহাম চুক্তি’ (Abraham Accords) সম্পর্কে বলেন: ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর কিছু কিছু মুসলিম দেশ এবং ইসরায়েলের ভুয়া সরকারের সাথে ‘আব্রাহাম চুক্তি’ স্বাক্ষর করেন। ‘আব্রাহাম চুক্তি’ হলো, যদি ফিলিস্তিন স্বাধীন একটি রাষ্ট্র হতে চায় তবে জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরের একটা অংশ এবং বাইতুল মোকাদ্দাসের পূর্ব অংশ ইসরাইলিদেরকে দিয়ে দিতে হবে। অন্যভাবে বলতে গেলে বাইতুল মোকাদ্দাস ও মসজিদুল আকসা ফিলিস্তিনের রাজধানী হতে পারবে না।
তার সংযোজন, ‘ইহুদি জায়নবাদ মুভমেন্ট খ্রিষ্টান উগ্রবাদী পিউরিটান্সদের থেকে উৎস লাভ করেছে’ -এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন: বর্তমানে আমেরিকাতে এই মুভমেন্টের ৫ কোটি সমর্থক রয়েছে এবং ইসরাইলের ভুয়া সরকারের প্রতি তারা নিরঙ্কুশ সমর্থন জানিয়ে যাচ্ছে। এদের উদ্দেশ্য কি? এদের মূল উদ্দেশ্য হলো, মুসলিম উম্মাহ’র প্রাণকেন্দ্রকে অনিরাপদ করে তোলা। তারা চায় না যে, ইসলামের কথা ও চর্চা বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছাক; অথচ সমগ্র বিশ্ব ইসলামি ও কুরআনি শিক্ষার জন্য তৃষ্ণার্ত। তারা চায় না জাতিগুলোর কাছে ইসলামের আহবান পৌঁছাক। তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ইসলামের আহবানকে অঙ্কুরেই শ্বাসরুদ্ধ করা। কিন্তু এটি তাদের অলীক কল্পনা বৈ কিছুই না।
ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গী প্রসঙ্গে ড. সানেয়ী বলেন: ট্রাম্প নিজেও খ্রিষ্টান জায়নবাদ ফির্কা’র সদস্য এবং প্রতিনিয়ত সে ইরান ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সে চায় অসম্পূর্ণ ‘আব্রাহাম চুক্তি’কে সম্পন্ন করতে, পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের বাদবাকি দেশগুলোকে এই চু্ক্তির আওতায় আনতে এবং প্রতিরোধ আন্দোলনের সকল অর্জনকে ধূলিস্যাৎ করে দিতে।
তিনি ইসলামি জায়নবাদের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন: যখন আন্তর্জাতিক জায়নবাদ পরিভাষাটি ব্যবহার করা হয় তখন এর উদ্দেশ্য শুধু খ্রিষ্টান ও ইহুদি জায়নবাদ নয়, বরং দুঃখজনভাবে মুসলিম উম্মাহ’র মাঝেও আমরা ইসলামি জায়নবাদকে প্রত্যক্ষ করছি। আর আমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে বড় হুমকি হলো ইসলামি জায়নবাদ।
ইমাম খোমেনি (রহ.) শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক ইনস্টিটিউটের ফ্যাকাল্টি মেম্বার, ইসলামি জায়নবাদের দৃষ্টান্তের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন: কাদিয়ানি ফির্কা নামে পরিচিত ‘আহমাদিয়া’ ফির্কা’র উৎপত্তি হলো ভারত থেকে। এই মুভমেন্টটি জায়নবাদের সবচেয়ে বড় ও গোঁড়া সমর্থকদের একটি; যারা ইসলাম, মহানবি (স.) ও কুরআনের নামে ইহুদিদেরকে সমর্থন করে থাকে। কাদিয়ানিরা মসজিদ তৈরি করে মুসলমানদেরকে খণ্ড-বিখণ্ড করতে চায় এবং ইব্রাহিমের সন্তানদেরকে সহযোগিতার শ্লোগান তুলে বলে যে, আমরা মুসলমানরা যদি হযরত ইব্রাহিমের সন্তান হয়ে থাকি, ইহুদিরাও তাঁর সন্তান; সুতরাং তাদের প্রতি সমর্থন জানাতে হবে, তাদেরকে মুসলমানদের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থানের অনুমতি দিতে হবে এবং নীল থেকে ফুরাত প্রকল্প বাস্তবায়নের সুযোগ তাদেরকে দিতে হবে। এই মুভমেন্টের বর্তমান অনুসারী প্রায় ৫ থেকে ৬ কোটি প্রতারিত মুসলিম তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং নিজেদের লক্ষ্য সম্প্রসারণে তাদের থেকে সাহায্য গ্রহণ করে থাকে। স্বভাবতই এই মুভমেন্টটি জায়নবাদী ইসরাইল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন সরকার এবং অপর পশ্চিমা সরকার সমর্থিত ও সাহায্য প্রাপ্ত। অতএব, মুসলিম উম্মাহ’র মাঝে এ মুভমেন্টটি ইসলামি জায়নবাদের দৃষ্টান্তগুলোর অন্যতম।
তিনি বলেন: ‘বাহাইয়্যাত’ শিয়াদের ভেতর থেকে উদয় হওয়া একটি মুভমেন্ট; বর্তমানে যারা ইসলামের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করেছে। বিশ্বের সকল বাহায়ী জায়নবাদ ও ইসরাইলের ভুয়া সরকারের সমর্থক। তারা ইরানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করে এবং গোয়েন্দাবৃত্তিতে লিপ্ত। বর্তমানে ইরানে বসবাসকারী বাহায়ীরা আমেরিকা, ব্রিটেন ও ইসরাইলের গোয়েন্দা। যদি ইরানের অভ্যন্তরীন টেরর ও গুপ্তহত্যাগুলোর ক্লু খুঁজতে হয় তাহলে বাহায়ীদের সন্ধানে যেতে হবে। এই গুপ্তচরবৃত্তির মাধ্যমে তারা পশ্চিমা বিশ্ব থেকে এক ধরনের মুক্তিপণ নিয়ে থাকে। যখন অধিকৃত ফিলিস্তিনের উকা’ এলাকায় অবস্থিত বাহাইয়্যাতের হেড কোয়ার্টার দখলকৃত ফিলিস্তিন অঞ্চলের আওতায় চলে আসে তখন তারা ‘বাহাউল্লাহ’কে সেখানে কবরস্থ করে। বাহায়ী’রা এমন পদক্ষেপে প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ঔপনিবেশিকরা তাদেরকে শান্ত করে বললো: তোমরা তোমাদের জীবনকে উপভোগ করো আমরা তোমাদেরকে অর্থ দেব এবং তোমাদের প্রয়োজনীয় সবকিছুর যোগান দিব। আর যদি গোয়েন্দাবৃত্তি করতে পারো তাহলে সুটকেস ভর্তি ডলারও তোমাদেরকে প্রদান করা হবে। সুতরাং জায়নবাদের বিষয়টি শুধু ইহুদিদের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং বর্তমানে মুসলিম উম্মাহ’র প্রাণকেন্দ্রে বিভিন্ন মুভমেন্ট এ বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত।
ইহুদি জায়নবাদের অপর দৃষ্টান্তের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে ধর্ম বিষয়ক এ বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষক বলেন: ক্ষোভ ভরা হৃদয়ে বলতে পারি, শিয়াদের মাঝেও কিছু কিছু লোক ইহুদি জায়নবাদের অংশ হিসেবে তৎপর রয়েছে। লন্ডনের শিয়াদের একটি বিশেষ দল যারা শিরাজিদের সাথে সম্পৃক্ত তাদের কথা কমবেশী সবাই শুনেছি। লন্ডনের মত বৃহৎ শহরে কেন তাদেরকে জমি দেওয়া হয়েছে এবং তাদেরকে হুসাইনিয়াহ (ইমামবাড়ি) নির্মাণের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে? এর মূল উদ্দেশ্য হলো সেখানে যেন শুধু ইমাম হুসাইন ইবনে আলী (আ.)-এর ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরা হয়, ইমাম হুসাইন ইবনে আলী (আ.)-এর বাণী ও বার্তাকে নয়। একইভাবে শিয়াদেরকে এ বিষয়টি বোঝানো যে, ইহুদিদের সাথে শিয়াদের আচরণ শত্রুপূর্ণ না হয়ে যেন শান্তিপূর্ণ ও সন্ধিপূর্ণ হয়। অথচ মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে সূরা মায়িদা’র ৮২ নং আয়াতসহ - لَتَجِدَنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَدَاوَةً لِلَّذِينَ آمَنُوا الْيَهُودَ وَالَّذِينَ أَشْرَكُوا ‘যারা ঈমান এনেছে তাদের প্রতি মানুষের মধ্যে ইয়াহূদ ও মুশরিকদেরকে তুমি অবশ্যই সবচেয়ে বেশি শত্রুতাপরায়ণ দেখতে পাবে,’- উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আয়াতে সুনিশ্চিতভাবে ইহুদিদের শত্রুতার কথা প্রকাশ করেছে। এই ইহুদিরা বর্তমানে মুসলিম উম্মাহ’র প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে এবং মুসলমানদের সামনে নিজেদেরকে পাওনাদার বলে জাহির করছে!
‘নীল থেকে ফুরাত’ -জায়নবাদীদের এই শ্লোগানের বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন: তারা বলে যে, সিরিয়া, লেবানন, জর্ডান, মিসরের কিছু অংশ ও ইরাককে অবশ্যই দখলকৃত ভূখণ্ডের সাথে সংযুক্ত হতে হবে। এদের মাথায় অশুভ চক্রান্ত চক্কর কাটছে। প্রথম পদক্ষেপে তারা গাজা’র উপর অমানবিক ক্ষেপণাস্ত্র ও বাঙ্কার বাস্টার বোমার বৃষ্টি ঝরিয়ে লেবানন ও হিজবুল্লাহর উপর হামলা শুরু করে তারা ভেবেছিল, হিজবুল্লাহর সাথে গাজার মত একই আচরণ করতে পারবে। অথচ আমেরিকা ও পশ্চিমা বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে সরবরাহকৃত অত্যাধুনিক অস্ত্র-শস্ত্র ও যুদ্ধের সরঞ্জাম সজ্জিত থাকা সত্ত্বেও মহান আল্লাহর ইচ্ছায় এক মাস পার না হতেই তারা হাত উঁচু করে আত্মসমার্পন করেছে। কিন্তু হিজবুল্লাহ যদি দুর্বল হতো, তাহলে তারা লেবাননকে এত সহজে ছেড়ে দিত না। লেবাননের হিজবুল্লাহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক (৫০টির অধিক) অত্যাধুনিক মিরকাভা ট্যাংক ধ্বংস করেছে এবং ১ শতাধিক ইসরাইলি অফিসারকে জাহান্নামে পাঠিয়েছে। এছাড়া, হাইফা ও তেলআবিবের মত কৌশলগত শহর হিজবুল্লাহর মিজাইল বৃষ্টির মুখে পড়েছে। এক্ষেত্রে আমরা সকলে জায়নবাদীদের পরাজয় প্রত্যক্ষ করেছি।
ইমাম খোমেনি (রহ.) শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক ইনস্টিটিউটের ফ্যাকাল্টি মেম্বার বলেন: জায়নবাদীদের সর্বশেষ চক্রান্ত সম্পর্কে বলতে হয় যে, জায়নবাদীরা লেবাননের সাথে যুদ্ধ বিরতি ও অবমাননাকর পরাজয়ের পর সিরিয়ার আলেপ্পো প্রদেশে নতুন এক ফ্রন্ট খুলে তৎপরতা আরম্ভ করেছে। গত এক বছরে জায়নবাদী তাকফিরি দলগুলো তাদের মত সুন্নি মাযহাবের অনুসারী গাজার মজলুম জনতার যখন সমর্থন ও সহযোগিতা প্রয়োজন ছিল তখন তারা কোথায় ছিল? কেনা ইসরাইলের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ তাদের পক্ষ থেকে গৃহীত হয় নি? কোন কারণে ইসরাইলের পরাজয়ের সাথে সাথেই তারা সক্রিয় হয়ে উঠলো? এই হলো ‘নীল থেকে ফুরাত’-এর ষড়যন্ত্র। জায়নবাদীরা যদি সিরিয়াতে বিজয়ী হয় তারা জর্ডানকে টার্গেট করবে। জর্ডান মনে করছে তারা নিরাপদ থাকবে, অথচ বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদ ও আন্তর্জাতিক জায়নবাদ জর্ডানের জন্য আলাদা নকশ এঁটেছে এবং জর্ডানকেও তারা আক্রান্ত করবে। একইভাবে জায়নবাদীরা ইরাক, মিসর ও সৌদি আরবকে খণ্ড বিখণ্ড করতে চায়।
তিনি বলেন: আরব দেশগুলো কেন এত ভীতু ও নিষ্ক্রিয় ভূমিকা রাখছে? যদি তারা প্রতিরোধ আন্দোলন ইস্যু এবং রক্ত পিপাষু ভুয়া ইসরাইলি সরকারের নৈরাজ্যের বিষয়ে উদাসীনতা দেখায়, তবে এক সময় তাদের পালাও আসবে।
ড. সালেহী বলেন: আন্তর্জাতিক জায়নবাদের -ইহুদি, খ্রিষ্টান ও মুসলিম জায়নবাদ নির্বিশেষে- প্রধান উদ্দেশ্য হলো জায়নবাদী ইসরাইলের ‘নীল থেকে ফুরাত’ প্রকল্পের বাস্তবায়ন ঘটানো। কিন্তু মহান আল্লাহর অনুগ্রহ ও ইমামে যামানা (আলাইহিস সালাম)-এর সহযোগিতায় অসম এ যুদ্ধে জায়নবাদী ইসরাইলের ভবলীলা সাঙ্গ হবে এবং সে নিজের ৮০ বর্ষপূর্তী’র মুখ দেখবে না।#176