মালাউই’তে আহলে বাইত (আ.)-এর মাযহাবের প্রচার ও প্রসারে তৎপর আব্দুর রাশিদ ইউসুফ বলেন: সরকারের কাছে থেকে আমরা এমন একটি অনুমোদন গ্রহণে সক্ষম হয়েছি যার ভিত্তিতে, শিয়ারা এদেশে অন্যান্য মুসলমানদের মত বৈধভাবে তৎপরতা চালাতে পারে। অবশ্য আগেও বিষয়টিতে কোন বাধা ছিল না, কিন্তু এই অনুমোদনের পর মালাউই’তে আমরা আনুষ্ঠানিক ও আইনগতভাবে কার্যক্রম চালাতে পারছি।

২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ - ০৪:৫০
মালাউই’তে শিয়ারা বৈধভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে : আব্দুর রাশিদ ইউসুফ

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): আফ্রিকার দেশ মালাউই’তে তৎপর বিশিষ্ট মুবাল্লিগ ও আল-মুস্তাফা (স.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষক ‘আব্দুর রাশিদ ইউসুফ’, মালাউই’তে মুসলমান ও শিয়াদের অবস্থার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বার্তা সংস্থা আবনা প্রতিবেদকের সাথে মতবিনিময় করেছেন।

ঐ সাক্ষাতকারের চুম্বক অংশগুলো এখানে তুলে ধরা হলো:

আবনা: আপনার নিজের সম্পর্কে বলুন।

-আমি আব্দুর রাশিদ ইউসুফ; মালাউই’র নাগরিক। আমি মূলতঃ মুবাল্লিগ এবং ইসলামের বাণী প্রচারের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছি। পাশাপাশি জামেআতুল মুস্তাফা আল-আলামিয়্যা’তে শিক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছি। এছাড়া পাকিস্তানি একটি স্কুলেও আমি শিক্ষকতা করি।  যেহেতু আমি একজন হাফেয ও ক্বারী এবং কুরআন ভিত্তিক তৎপরতার সাথে জড়িত তাই আমি ‘উলুমুল কুরআন’ তথা সায়েন্স অভ কুরআন সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি পড়িয়ে থাকি।

পাশাপাশি ‘ওয়ালি আসর (আ.)’ নামে একটি মাদ্রাসাও আমি পরচালনা করতাম; এতে শিয়া মাযহাব সম্পর্কে জানতে আগ্রহীদের প্রশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন কোর্সের ব্যবস্থা ছিল। ৫ বছরের অধিক সময় ধরে আমার এ কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। কিন্তু অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি। এছাড়া আমার বাড়িতেই বিভিন্ন বয়সের মেয়ে ও নারীদের কুরআন ও প্রাথমিক ইসলামি শিক্ষা দিয়ে থাকি; যা বর্তমানে মেয়েদের মাদ্রাসা  হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে এবং প্রায় ৮০ জন শিক্ষার্থী বর্তমানে এখানে মশগুল রয়েছেন।

আবনা: তাবলিগ ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আপনার কার্যক্রমে কোন বাধা থাকলে সে সম্পর্কে বলুন।

-মালাউই’তে শিয়া হিসেবে তৎপরতা শুরুর পূর্বে আমরা আহলে সুন্নত ও ওয়াহাবিদের থেকে শঙ্কিত এবং তাদের প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন ছিলাম। এতদসত্ত্বেও আমরা আমাদের তৎপরতা শুরু করি।

আমি ইরানে স্নাতক সম্পন্ন করেছি। এরপর ফেইসবুক ও হোয়াটস এ্যাপসহ অন্যান্য সোশ্যাল প্লাটফর্ম বিশেষ করে হোয়াটস এ্যাপের মাধ্যমে আমাদের তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। কেননা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আমাদের কোন কেন্দ্র ছিল না এবং শুধুমাত্র সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে আমরা তৎপরতা চালাতাম।  আল-হামদু লিল্লাহ্ মালাউই’র জনগণ শিয়া মাযহাব সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর তারা অবাক হতো যে, কেন শিয়ারা ওয়াহাবিদের পক্ষ থেকে এতটা আক্রমণের শিকার!

এছাড়া, আহলে সুন্নাতের আকাবির আলেমদের সাথে বিভিন্ন মুনাজির ও মতবিনিময়ের পর জনগণ আমাদের কথার সত্যতা এবং ওয়াহাবিদের কথা বাতিল হওয়ার প্রমাণ পায়। আর এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন শহরের জনগণ আহলে বাইত (আ.)-এর মাযহাবের শিক্ষাকে স্বাগত জানায়। এমনকি মহররম মাসে হযরত আবা আব্দিল্লাহিল হুসাইন (আ.)-এর শোক মজলিশ দেশের ১০টি স্থানে অনুষ্ঠিত হওয়ার পর বিষয়টি প্রতিপক্ষের ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই তারা জনগণের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে শিয়াদের সম্পর্কে জনমন বিষিয়ে তোলার চেষ্টা চালায়। তারা দাবি করতো যে, সরকারের চোখে তোমাদের তৎপরতা বৈধ নয় যে, তোমরা কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

প্রথম অবস্থায় আমরা বলতাম যে, ধর্মের ক্ষেত্রে আমাদের স্বাধীনতা রয়েছে এবং যেভাবে চাই দ্বীনি বিষয়াদি পালন করতে পারি। তবে এর পর আমরা সরকার থেকে অনুমোদন গ্রহণে সক্ষম হই যার ভিত্তিতে অন্যান্য মুসলমানদের পাশে আমাদের কার্যক্রম পরিচালনার পথে আর কোন বাধা নেই। অবশ্য আগেও বিষয়টিতে কোন বাধা ছিল না, কিন্তু এই অনুমোদনের পর মালাউই’তে আমরা আনুষ্ঠানিক ও আইনগতভাবে কার্যক্রম চালাতে পারছি।

এছাড় মালাউই’তে কোন শিয়া সমস্যায় পড়লে Ahlulbait Supreme Organization (ASO) নামে যে সংস্থা রয়েছে তার শরণাপন্ন হতে পারে। বস্তুত মালাউই’তে যে সকল সংস্থা তৎপরতা চালাচ্ছে বা ভবিষ্যতে অনুমোদন নিতে চায় তারা সকলেই ASO এর তত্ত্বাবধানে তৎপরতা চালাতে পারবে। এ সংস্থাটি শিয়াদের জন্য এবং তাদের মাযহাবগত তৎপরতার জন্য একটি ছাতা হিসেবে বিবেচিত।

আবনা: ASO এর অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে বলুন।

-এটা বলতে পারি যে, অর্থনৈতিকভাবে আমরা বর্তমানে আমাদের হাত একেবারে শূন্য; এমনকি অনুমোদন গ্রহণের পরও আমরা জানি না যে, কোথা থেকে কাজ শুরু করবো। অর্থনৈতিক কোন সোর্সও আমাদের নেই, এমনকি একটি রুম বা একটি অফিসও আমাদের সংস্থার জন্য আমরা ব্যবস্থা করতে পারি নি।

আবনা: মালাউই’তে শিয়াদের বিরুদ্ধে শত্রু পক্ষ বা পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষ থেকে কোন বাধা রয়েছে কি না?

-পাকিস্তান বা ইরানের মত দেশগুলোতে যে সকল স্পর্শকাতর বিষয় রয়েছে আমাদের দেশে তেমন কিছু নেই। কেননা মুসলমানরা হয় ওয়াহাবি চিন্তাধারার অনুসারী -স্বয়ং তাদের নিজেদের মধ্যেই সমস্যা রয়েছে- অথবা তারা জানে না যে, মাযহাবগত দিক থেকে তাদের অবস্থান কোথায়। এ কারণে মহানবি (স.)-এর প্রকৃত ইসলাম এবং আহলে বাইতের মাযহাবের দিকে এদেশের জনগণকে আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে এটা আমাদের জন্য বড় একটি সুযোগ।

সুতরাং যদি কোন সমস্যা থেকে থাকে তা দেশের অভ্যন্তর থেকেই এবং বাইরের থেকে আমরা কোন প্রকার হুমকির সম্মুখীন নই। অবশ্যই ওয়াহাবিরা সৌদি আরব থেকে পৃষ্ঠপোষকতা পায়; তাদের রেডিও ও টিভি চ্যানেল রয়েছে এবং ব্যাপকভাবে তারা তৎপরতা পরিচালনা করছে। এর বিপরীতে আমাদের তৎপরতা শুধু তাবলিগ ও মৌখিক কথোপকথনের মাঝেই সীমাবদ্ধ। আমাদের নিজস্ব কোন গণমাধ্যম থাকলে ব্যাপক ও কার্যকরি তৎপরতা চালাতে আমরা সক্ষম। কেননা আমরা প্রত্যক্ষ করছি যে, আহলে সুন্নতের আকাবিররাও তাদের মাযহাব সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য রাখেন না। তাদের সাথে মুনাযিরায় বসলে তারা মহানবি (স.)-এর আহলে বাইতের মাযহাবের হাক্কানিয়্যাত ও সত্যতা বুঝতে পেরে তা গ্রহণ করে নিচ্ছেন।#176