পার্সটুডে: সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ যিনি হায়াত তাহারির আশ-শামের নেতৃত্বে সশস্ত্র বিরোধী গোষ্ঠী দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর সরকার থেকে পদত্যাগ করেছিলেন এবং মস্কোতে গিয়েছিলেন সোমবার সিরিয়ার প্রেসিডেন্সির টেলিগ্রাম চ্যানেলে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে ঘোষণা দিয়েছেন যে তিনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সিরিয়ায় ছিলেন এবং ৮ ডিসেম্বর রোববার পর্যন্ত তিনি সিরিয়া ছেড়ে যাননি।

১৭ ডিসেম্বর ২০২৪ - ১৫:৩৯
সিরিয়া আবারও মুক্ত ও স্বাধীন হবে: ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আসাদের প্রথম বিবৃতি

আইএসএনএ-র উদ্ধৃতি দিয়ে পার্সটুডে অনুসারে,মস্কো থেকে আসাদের জারি করা বিবৃতিটির সম্পূর্ণ পাঠ্য নিম্নরূপ:

সিরিয়া জুড়ে সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর তাহারির আশ-শামের নেতৃত্বে সশস্ত্র দলটি যখন গত ৭ ডিসেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় দামেস্কে পৌঁছায় তখন প্রেসিডেন্টের ভাগ্য এবং অবস্থান সম্পর্কে নানা গুজব প্রকাশ হতে থাকে। এসব ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি এবং বানানো গল্প সত্য থেকে সম্পূর্ণ দূরে ছিল। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদকে সিরিয়ার মুক্তির বিপ্লবী আন্দোলন হিসাবে উপস্থাপন করাই এর প্রধান লক্ষ্য ছিল।

দেশের ইতিহাসের এই সংকটময় মুহুর্তে যখন সত্যকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত তখন এসব বিকৃতি এবং গুজবগুলোর উত্তর দেয়া প্রয়োজন মনে করছি। দুর্ভাগ্যবশত নিরাপত্তার কারণে সম্পূর্ণ ব্ল্যাকআউটসহ সেই সময়ে পরিস্থিতি এই বিবৃতি প্রকাশে বিলম্ব করেছিল।

আসাদ বলেন, সিরিয়া থেকে আমার প্রস্থান পরিকল্পিত ছিল না যেমনটি যুদ্ধের শেষ সময়ে কেউ কেউ দাবি করেছেন। অথচ ৮ ডিসেম্বর রোববার পর্যন্ত আমি দামেস্কে ছিলাম এবং সেই সময় পর্যন্ত আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। সন্ত্রাসী বাহিনী দামেস্কে অনুপ্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে আমাকে লাতাকিয়া (হামিমিম ঘাঁটি) তে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল যাতে আমাদের রাশিয়ান মিত্রদের সাথে সমন্বয় করে যুদ্ধ কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করা যায়।

সেই দিন সকালে হামিমিম বিমান ঘাঁটিতে পৌঁছে এটা পরিষ্কার হয়ে গেল যে আমাদের বাহিনী যুদ্ধের সমস্ত ফ্রন্ট থেকে নিজেদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে নিয়েছে এবং শেষ সেনা অবস্থানগুলো ভেঙে পড়েছে। মাঠের পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার সাথে সাথে রাশিয়ান সামরিক ঘাঁটি নিজেই ভারী ড্রোন হামলার মুখে পড়ে।

যেহেতু ঘাঁটি থেকে বেরিয়ে আসার কোন উপায় ছিল না তাই মস্কো অনুরোধ করেছিল যে বেস কমান্ড ৮ ডিসেম্বর রোববার সন্ধ্যার রাশিয়ায় অবিলম্বে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করে। দামেস্কের পতনের একদিন পরে এবং সামরিক অবস্থানের চূড়ান্ত পতন এবং অবশিষ্ট সমস্ত সরকারী প্রতিষ্ঠানের অচলাবস্থার পর এটি ঘটেছিল।

এসব ঘটনার কোনো পর্যায়েই আমি পদত্যাগ বা উদ্বাস্তু হওয়ার কথা ভাবিনি এবং কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে এমন কোনো প্রস্তাব করা হয়নি। একমাত্র সম্ভাব্য পদক্ষেপ ছিল সন্ত্রাসী আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া।

আমি জোর দিয়ে বলছি যে ব্যক্তি যুদ্ধের প্রথম দিন থেকে তার ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য তার দেশের পরিত্রাণের জন্য দর কষাকষি করতে অস্বীকার করেছে এবং তার জনগণকে অসংখ্য প্রস্তাব এবং প্রলোভনের বিরুদ্ধে ঝুঁকি নিতে অস্বীকার করেছে। এই ব্যক্তি সেই একই ব্যক্তি যিনি কেবলমাত্র একজন সন্ত্রাসীদের থেকে কয়েক মিটার দূরে সবচেয়ে বিপজ্জনক ও তীব্র যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি সামনের সারিতে সেনা কর্মকর্তা ও সৈন্যদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।

আসাদ বলেন, আমি সেই ব্যক্তি যে যুদ্ধের অন্ধকারতম বছরগুলোতে দেশ ত্যাগ করি নি, পরিবার এবং আমার জনগণের সাথে থেকেছি এবং চৌদ্দ বছরের যুদ্ধে রাজধানীতে সন্ত্রাসীদের অনুপ্রবেশকারী বোমা হামলা এবং বারবার হুমকির পরিস্থিতিতে সন্ত্রাসবাদকে প্রতিহত করেছি। তদুপরি, যে ব্যক্তি ফিলিস্তিনি ও লেবাননের প্রতিরোধকে কখনোই পরিত্যাগ করেনি এবং তার পাশে দাঁড়ানো মিত্রদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেনি সে তার জনগণকে পরিত্যাগ করতে পারে না।

আসাদ বলেন, আমি কখনো ব্যক্তিগত লাভের জন্য পদ চাইনি। আমি সর্বদা নিজেকে সিরিয়ার জনগণের বিশ্বাস দ্বারা সমর্থিত একজন জাতীয় অভিভাবক হিসাবে বিবেচনা করেছি।

তিনি বলেন, জনগণের ইচ্ছাশক্তি ও রাষ্ট্রকে রক্ষা করার,প্রতিষ্ঠানগুলোকে রক্ষা করার এবং তাদের পছন্দগুলোকে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বহাল রাখার জন্য অটুট প্রত্যয় আমার রয়েছে। আসাদ বলেন,রাষ্ট্র যখন সন্ত্রাসবাদের হাতে পড়ে এবং অর্থবহ অবদান রাখার ক্ষমতা হারিয়ে যায়,তখন যে কোনো অবস্থানই উদ্দেশ্যহীন হয়ে পড়ে আর দখলদারিত্বকে অর্থহীন করে তোলে। এটি কোনোভাবেই সিরিয়া ও জনগণের প্রতি আমার গভীর অনুভূতিকে কমিয়ে আনবে না। সিরিয়া আবারও মুক্ত ও স্বাধীন হবে বলেও বিবৃতিতে আশা করা হয়।#