বিভিন্ন পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, ইয়েমেনে আমেরিকার সাম্প্রতিক বিমান হামলার সময় দেশটির এফ-১৮ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার ঘটনাকে মার্কিন বিমান বাহিনীর শ্রেষ্ঠত্বের দাবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তারা যে ইয়েমেনি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা কার্যকরভাবে মোকাবেলা করতে সক্ষম নয় সেটাও গোটা বিশ্বের সামনে প্রমাণিত হয়েছে।

২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ - ২০:২৩
ইয়েমেনে হামলা করতে গিয়ে মার্কিন এফ-১৮ বিধ্বস্তের ঘটনা কী বার্তা দিচ্ছে?

এর আগে ব্রিটিশ ও মার্কিন যুদ্ধবিমানগুলো ইয়েমেনের বিভিন্ন অংশে বহু বার হামলা চালিয়েছে। অবশ্য ইয়েমেনের সেনাবাহিনী কখনোই নতজানু হয়নি, তারা দ্রুত প্রতিশোধ নিয়েছে এবং বারবার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে লোহিত সাগরে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র দেশগুলো বিশেষকরে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের যুদ্ধজাহাজগুলোতে হামলা করেছে। পার্সটুডে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ড বা সেন্টকমের এক বিবৃতিতে উদ্ধৃত করে লিখেছে, শনিবার ইয়েমেনের ক্ষেপণাস্ত্র গুদাম এবং কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার লক্ষ্য করে মার্কিন বাহিনী হামলা চালিয়েছে। মার্কিন বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, আমেরিকার বিভিন্ন জাহাজে হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইয়েমেনে তারা আক্রমণ চালিয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইয়েমেনে আমেরিকা ও ব্রিটেন মিলে বিমান হামলা চালানোর পর মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ড (সেন্টকম) রোববার জানায় ইয়েমেনে হামলার সময় আমেরিকা একটি এফ/এ-১৮ হর্নেট যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। তাদের দাবি এটা ছিল ফ্রেন্ডলি ফায়ার অর্থাৎ নিজেদেরই হামলা এবং বিমানের উভয় পাইলট বেঁচে গেছেন, তবে তাদের একজন আহত হয়েছেন।

সেন্টকম আরও দাবি করেছে, বিধ্বস্ত এফ-১৮ তাদেরই বিমানবাহী রণতরী হ্যারি এস. ট্রুম্যান থেকে উড্ডয়ন করেছিল। রণতরী বহরের একটি ক্ষেপণাস্ত্রবাহী পাহারাদার যুদ্ধজাহাজ গেটিসবার্গ ‘ভুলবশত’ হর্নেট বিমানটিকে লক্ষ্য করে গুলি করে আর সেটি আঘাতপ্রাপ্ত হয়।

শনিবার রাতে ইয়েমেনে যে হামলা চালানো হয় তা হ্যারি এস. ট্রুম্যান রণতরী বহর থেকেই চালানো হয়েছিল। এটি ছিল এই বহরের এই অঞ্চলে প্রবেশের পর তা থেকে প্রথম অভিযান। ধ্বংসপ্রাপ্ত মার্কিন যুদ্ধবিমানটির দাম ৭ কোটি ডলার।

সেন্টকম যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাকে ফ্রেন্ডলি ফায়ারের ফলাফল হিসেবে দাবি করলেও ইয়েমেনিরা এই ঘটনাটিকে অন্যভাবে বর্ণনা করেছে। ‘ফ্রেন্ডলি ফায়ার’ বা ভুলে নিজেদের গুলিতে নিজেদের যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত করার যে দাবি মার্কিন বাহিনী করেছিল তা প্রত্যাখ্যান করে ইয়েমেন বলেছে, তারা গুলি করে ওই এফ-১৮ যুদ্ধবিমানটি ভূপাতিত করেছে, বিমানটি ফ্রেন্ডলি ফায়ারের কারণে বিধ্বস্ত হয়নি।

ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি গত রোববার এক বিবৃতিতে বলেন, তারা লোহিত সাগরে একটি মার্কিন বিমানবাহী রণতরীতে আক্রমণ করে ইয়েমেনে আগ্রাসী হামলা চালানোর একটি যৌথ ইঙ্গো-মার্কিন প্রচেষ্টা নস্যাত করে দিয়েছেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, “ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনীর হামলার ফলে মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস হ্যারি এস. ট্রুম্যানকে লোহিত সাগরে নিজের আগের অবস্থান থেকে উত্তর দিকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।”

ওই রণতরী লক্ষ্য করে রোববার আটটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও ১৭টি ড্রোনের সাহায্যে একটি বিশেষ অভিযান চালানো হয় বলে তিনি জনান। জেনারেল সারি বলেন, এ অভিযানে ইয়েমেনের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনগুলো ধ্বংস করতে আকাশে উড্ডয়ন করা একটি মার্কিন এফ-১৮ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়।

আমেরিকান এফ-১৮ ফাইটার ধ্বংস হওয়ার ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ বার্তা রয়েছে। ইয়েমেনি হামলার মোকাবেলা করা আমেরিকা ও তার মিত্রদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন সর্বাধুনিক অস্ত্র মোকাবেলায় ইয়েমেনের সাফল্য তাদেরকে আরও নতুন নতুন সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে এবং এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ইয়েমেনিরা মার্কিন জাহাজের বিরুদ্ধে তাদের আক্রমণ এমনভাবে সাজাবে যাতে আমেরিকা তাদের অবস্থানে আগ্রাসন চালানোর চিন্তা করতে ভয় পায়।

কেউ কেউ বলছেন,- ইয়েমেনিদের হামলায় মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস হওয়ার ঘটনাটি এমনও হতে পারে যে, আমেরিকার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইয়েমেনিদের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে গিয়ে নিজেদের যুদ্ধবিমানকে ভূপাতিত করেছে। তবে ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনী স্পষ্টভাবেই বলেছেন- এটা তাদের কাজ, তারা মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছেন। ইয়েমেনিদের হামলা ঠেকাতে গিয়েই যদি মার্কিন বিমান বিধ্বস্ত হয়ে থাকে তাহলেও এটা তাদের বিমান বাহিনীর বড় ধরণের দুর্বলতা হিসেবেই গণ্য হবে।#