পার্সটুডে- মার্কিনীরা তাদের এই অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার জন্য নিজেদেরকে দায়ী করছে এজন্য যে, এ ঘটনায় ইয়েমেনকে দায়ী করলে দেশটির সেনাবাহিনীর মোকাবিলায় নিজেদের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়ে যাবে।

২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ - ১৯:১২
আমেরিকার অহংকার-খ্যাত এফ-১৮ যুদ্ধবিমান কে ভূপাতিত করল?

পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের বাব আল-মান্দাব প্রণালি এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যা গোটা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এর মধ্যে মার্কিন নৌবাহিনীর একটি অত্যাধুনিক এফ-১৮ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার ঘটনা ছিল উল্লেখযোগ্য। পার্সটুডে জানাচ্ছে, মার্কিনীরা দাবি করেছে, কথিত ‘ফ্রেন্ডলি ফায়ার’ বা নিজেদের গুলিতে যুদ্ধবিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় বিমানটির দুই পাইলট প্রাণে রক্ষা পেলেও একজন আহত হয়েছেন।

তবে ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনী ঘোষণা করেছে, যুদ্ধবিমানটি তাদের সঙ্গে মার্কিন বাহিনীর সংঘর্ষের সময় বিধ্বস্ত হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ঘটনায় ইয়েমেনি সেনাবাহিনীর শক্তিমত্তা প্রকাশের পাশাপাশি ইয়েমেনের মোকাবিলায় মার্কিন বাহিনীর দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে।

অবশ্য দেখেশুনে মনে হচ্ছে, মার্কিনীরা তাদের এই অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার জন্য নিজেদেরকে দায়ী করছে এজন্য যে, এ ঘটনায় ইয়েমেনকে দায়ী করলে দেশটির সেনাবাহিনীর মোকাবিলায় নিজেদের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়ে যাবে। এছাড়া, বিষয়টি স্বীকার করলে লোহিত সাগরে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে মার্কিন বাহিনীর চলমান হামলার বিরুদ্ধে যে সমালোচনা রয়েছে তার মাত্রা বেড়ে যাবে।

মার্কিনীরা তাদের ভাষায় ইয়েমেনের হুথি ‘মিলিশিয়াদের’ সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে; তবে এই অজুহাতে মার্কিন সেনারা ইয়েমেনের সামরিক ও বেসামরিক অবস্থানে একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু তা সত্ত্বেও বিশ্বের সর্বাধুনিক ও সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক সমরাস্ত্রের অধিকারী মার্কিন বাহিনী এখন পর্যন্ত ইয়েমেনের সামরিক বাহিনীর যুদ্ধ করার ক্ষমতা ধ্বংস করতে সক্ষম হয়নি।

মাত্র কয়েকদিন আগে ইয়েমেন থেকে নিক্ষিপ্ত একটি দূরপাল্লার হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কয়েক হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ইহুদিবাদী ইসরাইলের নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। ক্ষেপণাস্ত্রটি এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার সময় লোহিত সাগরে মোতায়েন আমেরিকা, ইসরাইল ও তাদের মিত্রদের কয়েক স্তরের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে এসেছে। ক্ষেপণাস্ত্রটির হামলায় ইসরাইলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ওই ক্ষতির প্রতিশোধ নিতে মার্কিন ও ইসরাইলি যুদ্ধবিমানগুলো আকাশে উড্ডয়ন করে এবং ইয়েমেনের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে বোমাবর্ষণ করে। দৃশ্যত ওই অভিযানের সময় আমেরিকার একটি অত্যাধুনিক এফ-১৮ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়।

মার্কিনীরা দাবি করছে, যুদ্ধবিমানটি তাদের নিজেদের গুলিতে বিধ্বস্ত হয়েছে। অথচ মার্কিন বিমানবাহী রণতরীতে হামলা চালানোর পাশাপাশি সব ধরনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর সক্ষমতা প্রদর্শন করার ফলে ইয়েমেনের সেনাবাহিনীর যে এরকম একটি যুদ্ধবিমান গুলি করে ফেলে দেয়ার ক্ষমতা তৈরি হয়েছে তা উপলব্ধি করার জন্য মাথায় অনেক ঘিলু থাকার প্রয়োজন হয় না।

এমন সময় মার্কিন যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার ঘটনা ঘটল যখন গত প্রায় এক দশক ধরে ইয়েমেন জল, স্থল ও আকাশপথে আমেরিকা ও তার মিত্রদের কঠোর অবরোধের শিকার; ফলে দেশটিতে বাইরে থেকে সমরাস্ত্র পাঠানোর সব দরজা বন্ধ রয়েছে। অথচ এরকম কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ইয়েমেনিরা এতটা শক্তি অর্জন করেছে যে, তারা তাদের দেশে মার্কিন হামলা মোকাবিলা করার একই সময়ে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ইসরাইলে হামলা চালানোর পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করছে।

ঠিক এ জায়গাতেই মার্কিন সেনাবাহিনী ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে। বিশ্বের এক নম্বর বাহিনী হিসেবে খ্যাত মার্কিন বাহিনী প্রায় এক বছর ধরে হামলা চালিয়েও ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনীকে কেন অকার্যকর করে দিতে পারল না তা নিয়ে খোদ আমেরিকার ভেতরেও চলছে ব্যাপক সমালোচনা। এ অবস্থায় যদি ওয়াশিংটন স্বীকার করে যে, ইয়েমেন এফ-১৮ যুদ্ধবিমানটি গুলি করে নামিয়েছে তাহলে আর রক্ষা থাকে না। তাই তারা ফ্রেন্ডলি ফায়ারের গল্প ফেঁদেছে।

তবে দুই পক্ষের দাবির কোনটি সত্য তার ঊর্ধ্বে উঠে বলা যায়, ইয়েমেনে হামলা চালাতে গিয়ে নিজের একটি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান হারানোর ঘটনা মার্কিন সেনাবাহিনীর মনোবল দুর্বল করে ফেলবে; চাই সেটি নিজেদের গুলিতে ভূপাতিত হোক অথবা শত্রু সেনাদের গুলিতে।#