পার্সটুডে- বিশ্বের স্বাধীনচেতা দেশগুলোর সরকারগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে আমেরিকা যেসব প্রক্রিয়া ও সরঞ্জামের অপব্যবহার করে সেগুলোর একটি হচ্ছে সাইবার সরঞ্জাম।

১৭ ডিসেম্বর ২০২৪ - ১৫:৩৮
মার্কিন সাইবার কমান্ড বিশ্বের দেশগুলোর জন্য কী পরিকল্পনা তৈরি করেছে?

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, মার্কিন সরকার প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের শ্রেষ্ঠত্ব রোধ করার এবং সমগ্র আধুনিক বিশ্বের উপর সম্পূর্ণ তথ্য নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছে। বার্তা সংস্থা ইরনার উদ্ধৃতি দিয়ে পার্সটুডে জানাচ্ছে, আমেরিকা ২০০৯ সালে একটি সাইবার কমান্ড তৈরি করে সেটিকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১১টি বিভাগের একটিতে পরিণত করে। বর্তমানে ২০২৪ সালে, সেই কমান্ড ১৫ বিলিয়ন ডলারের বাজেট নিয়ে মিত্র ও শত্রু দেশগুলোর বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি করার একটি নিরাপত্তা কমান্ডে পরিণত হয়েছে।

দৃশ্যত, সাইবার কমান্ড নামেই এটি বর্তমানে জার্মানি, ডেনমার্ক ও ইতালিসহ ১৭টি মিত্র দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে তৎপর রয়েছে। রাশিয়ার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘পিয়ার্স সেন্টার’র রিপোর্ট অনুযায়ী, এসব দেশের নেতাদের সকল গোপন খবর ও তথ্য মার্কিন নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে পাচার করে এই সাইবার কমান্ড।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটনের এ পদক্ষেপের চূড়ান্ত লক্ষ্য মিত্র দেশগুলোর ওপর নজরদারি বা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা নয়। বরং মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এই পদ্ধতির মাধ্যমে হ্যাকিং গ্রুপের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং বিশ্বব্যাপী বড় ধরনের ম্যালওয়্যার ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। এই কর্মপ্রক্রিয়ার মূল উদ্দেশ্য গোয়েন্দা ও ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা এবং এসব দেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যভাণ্ডার হস্তগত করা।

মার্কিন নিউজ চ্যানেল সিবিএস জানিয়েছে, অ্যামাজোন, মাইক্রোসফট ও গুগলের মতো বৃহৎ কোম্পানিগুলোকে এই কাজে কার্যকরভাবে ব্যবহার করে ওয়াশিংটন। এজন্য মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অন্তত ২৫০ কর্মকর্তাকে এসব বৃহৎ কোম্পানির বড় বড় পোস্টে বসানো হয়েছে।

এ ঘটনায় প্রমাণিত হয় যে, মার্কিন আইটি জায়ান্টরা দেশটির কথিত উদারপন্থী কর্মকর্তাদের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে এবং তারা মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ও সামরিক বাহিনীকে আন্তরিকতার সঙ্গে সহযোগিতা করছে। এছাড়াও, মার্কিন আইটি কোম্পানিগুলি ‘নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়ার’ মতো স্লোগান ব্যবহার করে বিশ্বের ডিজিটাল স্পেসকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নিরলসভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

গ্লোবাল টাইমস এ সম্পর্কে লিখেছে: বহু বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের, বিশেষ করে ফাইভ আইস গোয়েন্দা জোটের সদস্যদের (অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, কানাডা এবং নিউজিল্যান্ড) যোগাযোগ ও তথ্য সরঞ্জাম সরবরাহ করে আসছে। এসব সরঞ্জামে গোপনে তথ্য হাতিয়ে নেয়ার জন্য বিশেষ সফ্‌টওয়্যার, হার্ডওয়্যার ও ম্যালওয়্যার এর উপস্থিতির উচ্চ সম্ভাবনার কারণে এসব দেশের জন্য সমূহ বিপদ তৈরি করেছে।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, মার্কিন সরকার অদূর ভবিষ্যতে চীন ও ইরানের ক্ষেত্রে একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করার পরিকল্পনা মাথায় রেখেছে।

এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে মার্কিন সাইবার হামলা থেকে বাঁচার জন্য নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা শক্তিশালী করতে হবে। সেইসঙ্গে জাতিসংঘের মাধ্যমে এমন আন্তর্জাতিক আইন প্রণয়ন করতে হবে যাতে আর কেউ সাইবার স্পেসের অপব্যবহার করতে না পারে; আর করলেও তাকে কঠোর শাস্তি পেতে হয়। #

342/