সিরিয়ার ক্ষমতা দখলকারী তাহরির আস শাম এবং ইহুদিবাদী ইসরাইলের মধ্যে একটি বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন।

২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ - ১৯:২০
তাহরির আস শাম এবং ইসরাইলের মধ্যে সমন্বয় ছাড়া কী সিরিয়ায় কোনো পরিবর্তন আসত?

পার্সটুডের রিপোট অনুযায়ী ইরানি সংবাদপত্র ইতেমাদ অনলাইন একই বিষয়ে একটি নিবন্ধ লিখে বলেছে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতন এবং দামেস্কে তাহরির আস-শামের আগমনের পর এমনকি তার আগেই বিক্ষিপ্ত খবর ছড়িয়ে পড়েছিল এই গোষ্ঠীর সঙ্গে সালাফি মতাদর্শী আন্দোলনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে যারা ইসরাইলের সঙ্গে মিলে বাশার আল আসাদের বিরোধীতা করেছিল।

সম্ভবত এই দাবির পক্ষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল যে সিরিয়ার সরকার এবং ইসরাইলের মধ্যে বিরোধপূর্ণ এলাকা অধিকৃত গোলান মালভূমিতে তেল আবিব সরকারের ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা। এখানে বহু ইসরাইলি কর্মকর্তা এমনকি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পরিদর্শনে এসেছিলেন এবং সেই সময় সেখানে চিকিৎসা নেয়া আসাদ বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন তিনি।

আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি যিনি আজ নিজেকে "আহমদ আল-শারা" বলে পরিচয় করিয়ে দেয়ার পাশাপাশি একজন সিরিয়ান হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন এটা মজার বিষয় যে তিনিও সাদ হারিরির মতন যার বাবা দীর্ঘদিন সৌদি আরবে সক্রিয় ছিলেন সেখানেই জন্মগ্রহণ করেন।

বিরোধী মিডিয়ার দাবি ইসরাইলি মিডিয়া কার্টেল এবং তার সহযোগীরা এই সময়ে এই সম্পর্কের সাথে সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশের অনুমতি দেয় না এবং শুধুমাত্র প্রমাণ মিলে গেলেই আমরা এই সমস্যা সম্পর্কে সূত্র পেতে পারি। অন্যদিকে আল-জোলানির সমর্থকদের দাবি আল-জোলানির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য বিরোধী মিডিয়া এই খবর তৈরি ও পরিবেশন করছে।

কিন্তু এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে প্রতিরোধ অক্ষের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করা গণমাধ্যমই নয় এই আন্দোলনের বিরোধিতাকারী কিছু মিডিয়াও এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে এবং তারা অন্তত জোলানির বিরুদ্ধে ইসরাইলি সহযোগিতার অভিযোগ তুলেছে।

এই সংবাদ মাধ্যমগুলো জোর দিয়ে বলেছে যে সিরিয়ায় এর আগে ইহুদিবাদী ইসরাইল যতবার হামলা চালিয়েছে হায়াত তাহরির আস-শাম বাহিনীর অবস্থানের কাছাকাছি পয়েন্টগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে এমন একটি ঘটনাও দেখা বা শোনা যায়নি। তাই ইসরাইল ও হায়াত তাহরির আস-শাম সিরিয়ায় এক ধরনের যোগাযোগ রক্ষা করে এসেছে।

সম্ভবত এই দাবির পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলোর মধ্যে একটি যা এখনও সবার কাছে দিবালোকের মত স্পষ্ট তা হচ্ছে সিরিয়ার ভূখণ্ডে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর সামরিক আগ্রসনের বিষয়ে জোলানির অবস্থান।

জোলানি যিনি বর্তমানে সিরিয়ার অবিসংবাদিত নেতা এবং সম্ভবত এই দেশের ভবিষ্যত প্রেসিডেন্ট তিনি তার কোনো সাক্ষাৎকারেই সিরিয়ায় ইসরাইলের আগ্রাসনের কথা উল্লেখ করেননি এবং সাক্ষাৎকার গ্রহনকারীদের পীড়াপীড়ি সত্ত্বেও যখন তিনি এই আগ্রাসনের কথা উল্লেখ করেছিলেন তখন তিনি ইসরাইলের কথা উল্লেখ করেননি।

হায়াত তাহরির আস-শাম এবং ইসরাইলের মধ্যে অন্তত পরোক্ষ সমন্বয়ের অস্তিত্ব সম্পর্কে কিছু আরব বিশ্লেষককে কথা বলতে বাধ্য করেছিল এই জন্য যে ইসরাইলই ছিল প্রথম পক্ষগুলো মধ্যে একটি যে আল-জোলানি সরকারকে তৎক্ষণাৎ স্বীকৃতি দেয়। এবং বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিতে আরেকটি কারণ হল ফিলিস্তিন ইস্যুতে আল জোলানির অবস্থানের ধরন।

এটা কোন গোপন বিষয় নয় যে হামাস প্রথম দলগুলোর মধ্যে একটি যারা বাশার আসাদের পতনকে অভিনন্দন জানিয়েছিল এবং দাবি করেছিল যে বাশার আসাদের বিরোধিতার কারণে তারা দামেস্ক থেকে তার অফিস সরিয়ে নিয়েছে। গাজায় ইসরাইলি সেনাবাহিনীর পাশবিক হামলার ১৪ মাসেরও বেশি সময় পরেও তাহরির আস-শাম, একটি উগ্র সুন্নি সংগঠন হিসাবে ইসরাইলের কর্মকাণ্ডের নিন্দা করে একটি বিবৃতি বা মন্তব্য জারি করেনি। অথচ গাজার জনগণও সুন্নি মুসলমান।#